পড়াশোনা একজন মানুষকে তার মৃত্যুর আগপর্যন্ত ঘিরে থাকে। আর সঙ্গীত একজন মানুষের সবসময়ের সঙ্গী। তাই পড়াশোনা ও সঙ্গীতের মধ্যে ইতিবাচক একটি সম্পর্ক থাকবে সেটা বলে দেওয়ার দরকার পড়ে না। প্রশ্ন হলো, এই সম্পর্ক কতখানি? সঙ্গীত এবং পড়াশোনা একে অন্যকে কতটা প্রভাবিত করে?

বলতে দ্বিধা নেই যে, এমন প্রচুর শিক্ষার্থী আছেন যারা কি না গান শুনতে শুনতে পড়তে ভালোবাসেন। এতে করে পড়াশোনা ভালো হয় এবং বিশেষ করে, গণিতে বেশি মন দেওয়া যায় বলে মত প্রকাশ করেন অনেকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এর কার্যকারিতার উপরে। সঙ্গীত কি মানুষকে পড়াশোনায় মনোসংযোগ করতে বাঁধা প্রদান করে না? একাকী পড়াশোনা করতে চান বিধায় অনেকে কানে হেডফোন গুঁজে বই নিয়ে বসে পড়েন। কিন্তু মানুষ যে নীরবতা চায় নিজের পড়াশোনা করার জন্য, সেটা সঙ্গীত কী করে দিতে পারে?
এখন অব্দি এ ব্যাপারে প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছু গবেষণায় সঙ্গীতকে পড়াশোনার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে, আবার কিছু গবেষণায় ফল পাওয়া গেছে উল্টো। সমস্ত গবেষণাকে মিলিয়ে নিলে সঙ্গীত ও পড়াশোনার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে নীচের অনুসন্ধানগুলো তুলে ধরা যায় সহজেই।
১) কেন সঙ্গীত পড়তে সাহায্য করে?

সঙ্গীত একটি তরঙ্গের মতো। অনেকে হয়তো ভেবে থাকেন যে, মানুষের কথায় যদি মনোযোগ ব্যহত হয়, তাহলে সঙ্গীতেও তা হওয়া সম্ভব। হ্যাঁ, সম্ভব। তবে মূলত, একটি একই ধাঁচের সঙ্গীত মানুষকে আরো বেশি মনোসংযোগ করতে সাহায্য করে। মানুষের কথার ক্ষেত্রে বাড়তি মনোযোগ দিতে হয়, সেটার সাড়া দেওয়ার দরকার পড়ে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এমন কোনো সমস্যা নেই বিধায় এটি শুনতে শুনতে বইয়ের গভীরে আরো ভালোভাবে ডুব দেওয়া যায়।
২) সব সঙ্গীতই কি মনোযোগী করে তোলে?
একদম নয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্লাসিক্যাল মিউজিক সবচাইতে বেশি মানুষকে মনোযোগী করে তোলে পড়াশোনার প্রতি। কোনো মানুষ কী ধরনের গান শুনছেন, তার উপরে নির্ভর করে বলে দেওয়া যায় যে, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন। অনেক বেশি শব্দ ও ভিন্নতাপূর্ণ সঙ্গীত কখনোই কাউকে কোনো ব্যাপারে মনোযোগী হতে সাহায্য করে না। বরং, গবেষণায় এমন অনেকের কথা উঠে এসেছে যারা সঙ্গীত শুনে পড়েছেন, তবে তাঁদের ফলাফল খুব একটা ভালো হয়নি।
৩) নিজের পছন্দের সঙ্গীত নয়

অনেকে নিজের পছন্দসই সঙ্গীত শুনে পড়তে ভালোবাসেন। একদিক দিয়ে ব্যাপারটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। তবে, মজার ব্যাপার হলো, নিজের পরিচিত ও পছন্দের সঙ্গীত মানুষের কাছ থেকে মনোযোগ কেড়ে নেয়। তাই, পড়াশোনার ক্ষেত্রে দরকার পড়ে এমন সঙ্গীতের, যেটা কিনা একই ধরনের এবং পছন-অপছন্দভেদে একই গতির। সঙ্গীতের তাল, লয় ও সুরের ভিত্তিতে আমাদের মনোযোগ তৈরি হয়। তাই এর বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ায় মনোযোগ ব্যহত হতে পারে।
৪) সবার জন্য উপকারী নয়
কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা একটু মুখচোরা ধরনের, কিংবা যারা একইসাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারেন না, তাদের জন্য সঙ্গীত পড়াশোনার সময় খুব একটা ইতিবাচকভাবে কাজ করে না। এতে করে তাদের কাজের ফলাফল আরো খারাপ হয়ে যায়।
৫) ডোপামিন নিঃসরণে সঙ্গীত সাহায্য করে

অনেকের ক্ষেত্রে সঙ্গীত ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে। ফলে, অসম্ভব অস্থির মানসিক অবস্থাতেও খুব ভালো কাজ করে সঙ্গীত। মানুষকে শান্ত হয়ে যেতে সাহায্য করে।
তবে হ্যাঁ, সঙ্গীত আপনার ক্ষেত্রে কেমন কাজ করবে, কীভাবে কাজ করবে- এর পুরোটাই কিন্তু আপনার নিজস্বতার উপরে নির্ভর করছে। তাই, এককাতারে সবাইকে রেখে এক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।