স্পেসএক্স, টেসলা, পেপ্যাল, হাইপারলুপ… বর্তমান পৃথিবীর প্রযুক্তি জগতে নিয়মিত উচ্চারিত হওয়া কয়েকটি শব্দের মাঝে এগুলো একটি। আর এসবের পেছনে যে মানুষটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি এলন মাস্ক।

তার মতো অসাধারণ প্রতিভাধর একজন মানুষও সময় করে বই পড়েন, যা সাহায্য করে তাকে নতুন করে ভাবতে, নতুন আবিষ্কারের স্বপ্নে বিভোর হতে, আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নততর এক পৃথিবী রেখে যেতে। এলন মাস্কের জীবনে প্রভাব ফেলা এমন ১২টি বইয়ের কথাই চলুন জেনে নেয়া যাক।
১) লর্ড অফ দ্য রিংস – জে. আর. আর. টোলকিয়েন
এলন মাস্কের শৈশবটা কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে বড় হওয়ার সময়টুকুতে প্রচন্ড একাকিত্ব ঘিরে ধরেছিল তাকে। সেসব কাটাতে তিনি দ্বারস্থ হয়েছিলেন সায়েন্স ফিকশন ও এমনই বিভিন্ন কল্পসাহিত্যের প্রতি। লর্ড অফ দ্য রিংস এমনই একটি বই যা তাকে সুপার হিরোর মতো লড়ে দুনিয়া বাঁচাতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
২) দ্য আল্টিমেট হিচহাইকার্স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি – ডগলাস অ্যাডামস
মাস্ক একবার বলেছিলেন, ১২-১৫ বছর বয়সের দিকে নিজের অস্তিত্ব নিয়েই নিজেকে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর যখন ডগলাস অ্যাডামসের এই বইটি তার হাতে এলো, তখনই যেন সত্যিকার অর্থে নিজেকে খুঁজে পেলেন তিনি। এই বইটি পড়েই তিনি বুঝতে পারেন যে, সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ঠিকমতো প্রশ্ন করতে পারা। এটা করতে পারলে উত্তর খুঁজে পাওয়াটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
৩) বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন: অ্যান আমেরিকান লাইফ – ওয়াল্টার আইজ্যাকসন
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল একেবারে শূন্য থেকে। তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এমন জীবনই ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল এলন মাস্ককে। কারণ তার নিজের জীবনটাও ছিলো অনেকটাই এমনই।
৪) আইনস্টাইন: হিজ লাইফ এন্ড ইউনিভার্স – ওয়াল্টার আইজ্যাকসন
আইনস্টাইনের জীবনী এলন মাস্ককে প্রচন্ড মাত্রায় অনুপ্রাণিত করেছিল। দুর্ভাগা এক পিতা, যিনি কি না কোনো চাকরি খুঁজে পাচ্ছিলেন না ঠিকমতো, তার দেখানো তত্ত্বানুসারেই আজকের দুনিয়ার অনেক কিছু আমরা ব্যাখ্যা করে থাকি। নিজের মেধা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা দিয়ে আইনস্টাইন যেভাবে দুনিয়া বদলে দিয়েছিলেন, মাস্কও ঠিক একইভাবে যে সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
৫) স্ট্রাকচার্স: অর হোয়াই থিংস ডোন্ট ফল ডাউন – জে. ই. গর্ডন
স্পেস এক্স নিয়ে আসার আগে রকেট সায়েন্স নিয়ে দরকারি অনেক জ্ঞানই এলন মাস্ক লাভ করেছিলেন গর্ডনের এই বইটি থেকে।
৬) ইগনিশন!: অ্যান ইনফর্মাল হিস্টোরি অফ লিকুইড রকেট প্রপেল্যান্টস – জনি ডি. ক্লার্ক
এই বইটিও রকেট সায়েন্স নিয়ে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন কারিগরি জ্ঞান, বিভিন্ন পরীক্ষণের চমৎকার সব ফলাফলের কথা, সেগুলো কেন ও কীভাবে হয়েছিল এবং সর্বোপরি এর পেছনের নানাবিধ রাজনীতি।
৭) সুপারইন্টেলিজেন্স: পাথ্স, ডেঞ্জার্স, স্ট্রাটেজিস – নিক বোস্ট্রোম
কম্পিউটারের বুদ্ধিমত্তা যদি মানুষের বুদ্ধিমত্তার থেকে বেশি হয়ে যায়, তাহলে মানুষের কী হতে পারে- সেসব নিয়েই নিক বোস্ট্রোম আলোচনা করেছেন এই বইয়ে। এলন মাস্কের মতো মানুষেরা যে ভবিষ্যতে সম্পর্কে একধরনের সূক্ষ্মদৃষ্টির অধিকারী হয়ে থাকেন, তা তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। কম্পিউটার বনাম মানুষের এমন লড়াইয়ের কথা কল্পনা করে একবার তাই তিনি টুইট করেছিলেন, “আমাদেরকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে আরো সতর্ক হতে হবে।”
৮) জিরো টু ওয়ান: নোটস অন স্টার্টআপস অর হাউ টু বিল্ড ফিউচার – পিটার থিয়েল
পিটার থিয়েল সম্পর্কে একবার এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছিলেন, “পিটার থিয়েল কতগুলো যুগান্তকারী কোম্পানি গড়ার কারিগর, আর জিরো টু ওয়ান দেখায় যে, তিনি সেটা কীভাবে করেছেন”। সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে সফল কয়েকজন ব্যক্তির কথা বললে তাদের মাঝে থাকবে পিটার থিয়েলের নামও। তার মতো বিখ্যাত তার এই বইটিও। না পড়লে এখনই পড়ে নেয়া উচিত আপনার।
৯) হাওয়ার্ড হিউজেস: হিজ লাইফ এন্ড ম্যাডনেস – ডোনাল্ড এল. বার্লেট ও জেমস বি. স্টীল
খামখেয়ালী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও এভিয়েশন টাইকুন হাওয়ার্ড হিউজেসের এ জীবনী যে এলন মাস্ককে আকৃষ্ট করেছে, তাতে খুব বেশি অবাক হবার কিছু নেই। কারণ মাস্ক নিজেও বেশ কিছু কোম্পানির কর্ণধার। তিনিও মানুষের মহাকাশ যাত্রার ইতিহাস নতুন করে লিখবার দায়িত্ব নিয়েছেন।
১০) মার্চেন্টস অফ ডাউট – নাওমি অরেস্টেস ও এরিক এম. কনওয়ে
২০১৩ সালে এক কনফারেন্সে মাস্ক এই বইটি পড়বার উপদেশ দিয়েছিলেন উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে।
১১) দ্য ফাউন্ডেশন ট্রিলজি – আইজ্যাক আজিমভ
আজকের দিনে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে এলন মাস্কের যে বিপুল আগ্রহ ও কর্মযজ্ঞ, এর পেছনে শৈশবে তার প্রচুর সায়েন্স ফিকশন পড়া দায়ী। এর মাঝে গ্র্যান্ডমাস্টার অভ সায়েন্স ফিকশন খ্যাত আইজ্যাক আজিমভের কালজয়ী সায়েন্স ফিকশন দ্য ফাউন্ডেশন ট্রিলজির স্থান পাওয়া তাই খুব স্বাভাবিকই বটে।
১২) দ্য মুন ইজ অ্যা হার্শ মিসট্রেস – রবার্ট হেইনলেইন
১৯৬৬ সালে প্রকাশিত পুরষ্কারজয়ী এ কল্পবিজ্ঞানের বইয়ে লেখক এমন একটি ডিস্টোপিয়ান সমাজের কথা তুলে ধরেছেন, যা আসলে আমাদের থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাস্কের মতো কল্পনা করতে পারা মানুষের কাছে তাই এ বইটিও বেশ ভালোই লেগেছে, কারণ বইটিও যেন কল্পনার ছলে সত্যি এক সময়ের আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল।